স্বপ্ন পূরণ :
ব্যাগে করে আনা ঠাকুরের ছবিটা চিত্রাঙ্গদা ওয়ারড্রবের উপর দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে রেখেছে । অস্থায়ী ভাড়ার ঘর এটি ।তাই দেয়াল ফুটো করে ঠাকুর কে দেয়ালের প্রাণহীন দেহে প্রাণ সঞ্চার করার অনুমতিটা চিত্রাঙ্গদা দিতে পারে নি ।তবে ওয়ারড্রবের উপর যে সে ঠাকুরের তেমন কম যত্ন করছে তা কিন্তু নয় ! ঢাকার বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে ঠাকুর ঘরে দিনে নিয়ম করে যেভাবে যত্ন নিতো ঠিক সেইভাবেই সে ঠাকুরের যত্ন এই বিদেশ বিভূঁইয়েও নিচ্ছে ।তবে প্রতিবারের ঠাকুরের প্রার্থনায় চিত্রাঙ্গদা একটা জিনিসই আজকাল মনে মনে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে চায় ।খালি একটা জিনিস , একটা প্রার্থনা!-“ও , ঠাকুর ! তুমি আমার স্বামীকে সুস্থ করে দেও ।ও , ঠাকুর ! আমার স্বামীর শরীর থেকে ঐ মৃত্যুর কিটটাকে ধ্বংস করে দেও !”মাঝে মাঝে চিত্রাঙ্গদার স্বামী অসীম তার স্ত্রীর এমন প্রার্থনা দেখে বরাবরই হাসে ! হাসিটা যদিও এখন আর তেমন সজীব সতেজ নেই …..তবে এখনো চিত্রাঙ্গদার কাছে অসীমের এই হাসিটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পুরুষালি হাসি !
ঢাকা থাকাকালীন যখন রোগটা ধরা পড়েছিল তখন মোটামুটি হলেও হাঁটা চলা করতে পারতো অসীম । কিন্তু ভারতে চিকিৎসা করাতে আসার পর থেকে অসীমের শরীর ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে । যদিও আজ মোটামুটি ভালো লাগছে তার ।তাই একটু কষ্ট করে উঠে গিয়ে সে তার প্রার্থনারত স্ত্রীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।প্রায় অনেক দিন পর এরকম ছোঁয়া পেয়ে চিত্রাঙ্গদা খানিকটা শিহরিত হলেও নিজেকে সামলে নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলো । কারণ ,আর যাই হোক ঠাকুরের প্রার্থনারত অবস্থায় কি স্বামীর সোহাগ নেয়া চলে ? অসীম অবশ্য পাত্তা দিলো না আর দিবেই বাকি! পৃথিবীতে থাকার যতোটুকু সময় ছিল ঠিক ঐটুকু সময়তো প্রায় অতিক্রম হয়ে গিয়েছে ,যা এখন চলছে তা তো বোনাস ভাতা,তাই নয় কি ? অসীম আস্তে আস্তে নিজের মুখখানা চিত্রাঙ্গদার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বললো ,”চিত্রা ! জানো রাতে একটা স্বপ্ন দেখলাম । অনেক পুরোনো স্বপ্ন । আগেও অনেক দেখেছি।” চিত্রাঙ্গদা ততোসময়ে ঠাকুর পুজো শেষ করে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল,”কি দেখলে ?” অসীম চিত্রাঙ্গদা কে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল ,”দেখলাম তুমি আমি আর আমাদের ছোট্ট ছুটি শত অসচ্ছলতা থাকার পরেও একসাথে বিদেশ বিভূঁইয়ে বেড়াতে এসেছি । তিন জনে কত্ত মজা করছি ! ভেবে দেখো সত্যি সত্যি কিন্তু আমরা বাংলাদেশ থেকে শত অসচ্ছলতা সত্ত্বেও বিদেশে কিন্তু এসেছি ! কারণটা আমার ক্যান্সারই হোক কিংবা তোমার আর ছুটির জন্য শেষবারের মতো নিজেকে এই পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা !!! তবে আমরা কিন্তু বিদেশ বিভূঁইয়ে সত্যিই এসেছি ……….”